চলুন একসাথে একটি পরিবর্তন আনি
ইফতার সামগ্রী বিতরণ শরীয়তপুর ইসলামী যুব সোসাইটির নিয়মিত কর্মসূচির একটি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভাবী সিয়াম পালনকারীরা যেন রামযান মাসে নির্বিঘ্নে সিয়াম পালন ও ইবাদত-বন্দেগী করতে পারেন, সে লক্ষ্যে তাদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ইফতার করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাবে তাকে সিয়াম পালনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হবে। তাতে সিয়াম পালনকারীর সাওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। (সুনান তিরমিযী: হাদীস-৮০৭; সুনান ইবনু মাজাহ: হাদীস-১৭৪৬) ইফতার সামগ্রীর মধ্যে থাকে,ছোলা,মুড়ি,চিড়া,খেজুর,চিনি, ইসবগুলের ভূসি ইত্যাদি।
ইসলামের অন্যতম শিক্ষা মানবসেবা। কনকনে শীতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় শীতার্ত মানুষদের একটুখানি উষ্ণতা এনে দিতে শরীয়তপুর ইসলামী যুব সোসাইটি প্রতি বছর আয়োজন করে ‘শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি’।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘দয়াবান লোকদের পরম করুণাময় আল্লাহও দয়া করেন। তোমরা জমিনবাসীর প্রতি সদয় হও, আসমানবাসী তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (সুনান আবু দাউদ: হাদীস-৪৯৪১; সুনান তিরমিযী, হাদীস-১৯২৪)শরীয়তপুর ইসলামী যুব সোসাইটি প্রতিটি স্পটে শীতবস্ত্র বিতরণের সময় মানুষকে বিশুদ্ধ ইসলাম পালনে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। ঈমান-আকীদা, সালাত-সিয়ামের গুরুত্ব, নীতি-নৈতিকতা ও সততার অপরিহার্যতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নসিহাহ পেশ করা এবং ক্ষেত্রবিশেষ দাওয়াতি বই ও লিফলেট বিতরণ করা হয়।
দরিদ্র মানুষের মুখে একটু হাসি ফুটানোর জন্য শরীয়তপুর ইসলামী যুব সোসাইটি আয়োজন করে থাকে ঈদ সামগ্রী বিতরণ।আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বলেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে।(বুখারি, হাদিস : ১২)অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের মধ্যে উত্তম মানুষ তারা, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৯৭১)।ঈদ সামগ্রী এর মধ্যে থাকে সেমাই, চিনি,পোলার চাল, তৈল, গুঁড়ো দুধ ইত্যাদি।
সাদকাহ জারিয়াহ মানে— যে দানের উপকারিতা শুধু এককালীন নয়; বরং দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকে। যে দানের উপকারিতা একবারই অর্জিত হয়, সেগুলোর সওয়াবও একবারই হয়। পক্ষান্তরে যে দানের উপকারিতা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকে, সেগুলোর সাওয়াব তথা বিনিময়ও মহান আল্লাহ দীর্ঘদিন পর্যন্ত অব্যাহত রাখেন। আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার আমল ছাড়া। ১. সাদাকাহ জারিয়াহ; ২. এমন ইলম বা জ্ঞান যার দ্বারা অন্যের উপকার হয়; ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্যে দু'আ করতে থাকে’। (সহীহ মুসলিম: হাদীস-১৬৩১) শরীয়তপুর ইসলামী যুব সোসাইটির সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রকল্পসমূহের মধ্যে রয়েছে মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, বৃক্ষ রোপন, দীনি বই-পুস্তক বিতরণ ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ ইত্যাদি। এসব প্রকল্পের নির্দিষ্ট কোনো একটির দায়িত্ব এককভাবে নেওয়া যায়। আবার কেউ চাইলে সাদাকাহ জারিয়াহ খাতে যে কোনো পরিমাণ দান করতে পারেন। সে অর্থ কতৃপক্ষ সাদাকা জারিয়াহর যে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজন অনুভব করবেন সে খাতে ব্যয় করবেন।
মানব সেবা মহান আল্লাহকে খুশি করার অন্যতম মাধ্যম। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়, পাপমুক্ত হওয়া যায়। তেমনি মানব সেবার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। এ জন্যই মহান আল্লাহ বান্দাদের উদ্দেশ্য করে পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোটাই সৎকর্ম নয়; বরং প্রকৃত সৎকর্মশীল ওই ব্যক্তি, যে বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতামণ্ডলী, আল্লাহর কিতাব ও নবীদের ওপর এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করে নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, প্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭) মানুষের জীবন বাঁচাতে কোনো রকম বিনিময় ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রক্তদানও একটি মহান ইবাদত। কেউ যদি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এই ইবাদত করতে পারে, তাহলে সে মহান আল্লাহর কাছে এর উত্তম প্রতিদান পাবে ইনশাআল্লাহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে বাঁচালো। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩২) যদিও আমরা সোসাইটির পক্ষ থেকে এখনো রক্তদান কর্মসূচি চালু করতে পারিনি তবে আমাদের কর্মপরিকল্পনা এটা রয়েছে। শরীয়তপুর ইসলামী যুব সোসাইটি খুব শীঘ্রই এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ।
গাছ লাগানোর গুরুত্ব ও ফযীলত ও অপরিসীম। এটি একটি সাদাকায়ে জারিয়ামূলক নেক কাজ। যদি কেউ মানুষ কিংবা প্রাণীকূলের উপকার সাধনের লক্ষ্যে ফলজ, বনজ বা ঔষধি গাছ রোপণ করে এবং এর মাধ্যমে সাওয়াব আশা করে, তবে এটি একটি উত্তম সাদাকায়ে জারিয়াহ; যার সওয়াবের ধারা ব্যক্তির মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তাহলে তা সে ব্যক্তির জন্য সাদাকাস্বরূপ।’ (সহীহ বুখারী: হাদীস-২৩২০, সহীহ মুসলিম: হাদীস-১৫৫৩) শরীয়তপুর ইসলামী যুব সোসাইটি সাধারণত বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা এবং স্কুল মাঠে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানোর চেষ্টা করে। যাতে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি মানুষ তা থেকে উপকার লাভ করতে এবং ফল বিক্রি করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামগত উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে।
“পাঁচটি বস্তুর ওপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, বাইতুল্লাহর হজ করা এবং রমযানের সাওম পালন করা”। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬ গরীব জনগোষ্ঠী যাকাতের প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়াতে এবং জীবন যাপনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাকাতের উপকার ও গুরুত্ব অপরিসীম হওয়ার কারণে মুসলিমগণের ওপর যাকাত ফরয করা হয়েছে। যাকাত ইসলামের সৌন্দর্যসমূহের একটি অন্যতম সৌন্দর্য। এ ছাড়াও যাকাত ইসলামের সৌন্দর্যের বাহ্যিক রূপ এবং সু-স্পষ্ট নিদর্শন।
স্বত্ব © 2024 শরীয়তপুর ইসলামি যুব সোসাইটি - সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত। পরিষেবার শর্তাবলী | গোপনীয়তা নীতি